• blogger
  • facebook
  • linkedin
  • twitter
  • youtube

ইতিহাস কি? ইহা কি খায় নাকি মাথায় দেয়??

ইতিহাস! শুরুতেই একটি গল্প বলি!

একদিন তিনজন সুশীল ব্যক্তিকে একটি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হল। এরপর উনাদেরকে চেয়ারে আরাম করে বসতে দেয়া হল, এবং হাতে একটি করে কাগজ ও কলম দেয়া হল।

অতঃপর একটু পর ‘জনাব কুদ্দুস’ আসিলেন। কুদ্দুস সাহেব ঐ তিন সুশীলকে বলিলেন, “সম্মানিত ভদ্রমহোদয়গণ, ঐ যে সামনের গাছটির ডালের উপর একটি কাল রঙয়ের পাখি বসে আছে; আপনারা কি পাখিটিকে দেখতে পারছেন?”

সুশীলগণ হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলেন!

এইবার জনাব কুদ্দুস বলিলেন, ‘এখন আমি ঐ পাখিটিকে আমার হাতের এই বন্দুক দিয়ে গুলি করবো’। বলা মাত্রই, কুদ্দুস সাহেব গুলি চালালেন; পাখিটি মৃত্যুবরণ করিল এবং অবশেষে ভূপতিত হইল।

“কি দেখলেন আপনারা, দয়া করে কাগজে লিখুন”; এইবার অনেকটা কড়া-স্বরেই কুদ্দুস সাহেব সুশীলদেরকে নির্দেশ দিলেন। ভয়ে ভয়ে সুশীলরা লেখা শুরু করলো এবং পাঁচ-মিনিট পর উনারা কাগজগুলা জনাব কুদ্দুসকে জমা দিলেন!

কাগজগুলো হাতে নিয়ে কুদ্দুস সাহেব বললেন, “আপনারা এইবার আসতে পারেন!” বলা মাত্রই, সুশীলগণ যে যার বাড়ি চলে গেলেন!!

________________________________________

পরদিন সকালের নাস্তার পর, হাতে এক কাপ চা নিয়ে আরাম কেদারায় বসে; কুদ্দুস সাহেব সুশীলদের লেখা ঐ কাগজ তিনটি পড়তে লাগলেন। লেখাগুলো ছিল নিম্নরূপঃ

সুশীল-১: জনাব কুদ্দুস একজন হৃদয়হীন মানুষ। উনি একজন অত্যাচারী এবং হিংস্র প্রজাতির পশু-সদৃশ। উনি আমার চোখের সামনে একটি নিরীহ এবং অসহায় পাখিকে গুলি করে হত্যা করলেন। ইহা পরিষ্কারভাবে ‘পাখি-অধিকার’ লঙ্ঘন। আমি আন্তর্জাতিক পাখি-রক্ষা কমিটিকে অনুরোধ করবো; আপনারা দয়া করে এর বিচার করুন। কুদ্দুস মিয়ার ফাঁসি চাই!!

সুশীল-২: জবাব কুদ্দুস একজন শৌখিন মানুষ। উনি অনেক আলিশান এবং বিলাসী জীবনযাপন করেন। উনি একজন দুর্দান্ত পাখি-শিকারি। উনার শিকারের কলাকৌশল দেখে আমি মুগ্ধ। অসাধারণ উনার দৃঢ়তা এবং ব্যক্তিত্ব। উনার আজকের শিকার করা দেখে; আমার চোখের সামনে মুঘল সম্রাটদের হাতির পিঠে চড়ে বাঘ শিকারের সেই দৃশ্য ভেসে উঠলো। কুদ্দুস মিয়া দীর্ঘজীবী হউন!!

সুশীল-৩: জনাব কুদ্দুস একজন ব্যবসায়ী মানুষ। উনি প্রতিদিন গহীন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে পাখি শিকার করেন এবং ঐসব পাখি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এভাবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পাখি শিকার করায় উনাকে আমি স্যালুট জানাই। উনার সাহস দেখে আমি গর্বিত। আজ বাংলাদেশে এমন বীর-পুরুষের খুবই অভাব। উনার এই ব্যবসা সফল হোক। কুদ্দুস মিয়ার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি!!

** পড়া শেষে, কুদ্দুস সাহেব ‘১’ এবং ‘২’ নম্বর কাগজগুলো ছিঁড়ে ফেললেন। এরপর ‘৩’ নম্বর কাগজটি উনার ড্রাইভারকে দিয়ে বললেন, “আবুল, এই কাগজটা আসলামের প্রেসে দিয়ে আই-তো। আগামীকালের পেপারের প্রথম পাতায় লেখাটা যেন ছাপা হয়”!

_____________________________________________________

হ্যাঁ, অবাক হবেন না। ইহাই হল – ‘ইতিহাস’। একটি ঘটনাকে এরূপে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে, যাহা পরবর্তীতে ‘ইতিহাস’ নামক একটি বস্তুতে রূপান্তরিত হয়। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে; ইতিহাস স্থান, কাল এবং পাত্রভেদে অবশ্যই পরিবর্তনশীল। আর ক্ষমতাবান এবং বিজয়ীরাই ইতিহাস রচনা করেন

তাই ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ভালো, তবে পরামর্শ থাকবে – “দয়া করে একটু সাবধানে নাড়া দিয়েন! নাহলে ধ্বসে পড়তে পারে”!!

_____________________________________

প্রথম প্রকাশঃ সামহোয়্যার ইন…ব্লগ
০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০৩
স্থানঃ বো রোড; লন্ডন; ইংল্যান্ড!

I am an Associate Professor at the Institute for Risk and Disaster Reduction (IRDR) at University College London (UCL). My background includes research into the field of disaster risk reduction (DRR), community vulnerability and resilience, GIS and remote sensing, climate change adaptation, conflict and migration, and climate justice. I obtained a PhD in Disaster Risk Reduction from UCL, a joint MSc degree in Geospatial Technologies from Spain, Germany, and Portugal; and a Bachelor of Urban and Regional Planning degree from Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET).

2 Comments

  1. Md. Mostahidur Rahman · July 23, 2017

    ইতিহাস স্থান, কাল এবং পাত্রভেদে অবশ্যই পরিবর্তনশীল। আর ক্ষমতাবান এবং বিজয়ীরাই ইতিহাস রচনা করেন।

    Like the quotation,

Leave a Reply